রাজশাহী: ৩৩ ক্রেডিট প্রথা বাতিলের দাবিতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) উপাচার্যসহ ২২ শিক্ষককে প্রায় ২০ ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান করেছেন তারা।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা পৌনে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান করছিলেন দুইটি ব্যাচের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী।
এর আগে শনিবার দুপুর ২টা থেকে সেখানে অবস্থান করছেন তারা। দাবি না মানা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. জালালউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষকরা এখনও অবরুদ্ধ আছেন। বেলা ১২টায় (রোববার) জরুরি সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে শিক্ষার্থীদের জানানো হলেও তারা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেননি। তারা এখনও সেখানে অবস্থান করায় শিক্ষকরা বের হতে পারছেন না।
রুয়েট সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এরপর সিরিঞ্জ দিয়ে নিজেদের শরীর থেকে রক্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রবেশ পথে ঢেলে সেখানে অবস্থান নেন। পরে দুপুর ২টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলার বারন্দায় উপাচার্যের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ ২২ জন শিক্ষক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
পরে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে আলোচনায় আসতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানায় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির বিষয়ে অটল। অন্যদিকে, এ বিষয়ে শনিবার বিকেলে জরুরি একাডেমিক সভা ডাকে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেখানে ৩৩ ক্রেডিট বাতিলের সিদ্ধান্ত দেয়নি একাডেমিক কাউন্সিল।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ২৮ জানুয়ারি থেকে আমরা আন্দোলন করে আসছি। আমাদের আন্দোলন দমাতে একটি হলের শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও আমরা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নেমেছি। বিক্ষোভ মিছিল, রক্ত ঢালাসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। বর্তমানে উপাচার্যের কক্ষের সামনে অবস্থান করছি। আমাদের দাবির পক্ষে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা আমাদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করবো না।
রুয়েট সূত্রে জানা গেছে, নতুন নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে দুই সেমিস্টারে বাধ্যতামূলক ৪০ ক্রেডিটের মধ্যে ন্যূনতম ৩৩ ক্রেডিট অর্জন করতে হয়। অন্যথায়, তাকে পুনরায় সেই বর্ষেই থাকতে হবে। এর আগে নিয়ম ছিল, কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য বা অনুপস্থিতির কারণে ন্যূনতম ক্রেডিট অর্জন না করলেও পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারতো। সেক্ষেত্রে পরবর্তীকালে তাকে পরীক্ষা দিয়ে ওই ক্রেডিট অর্জন করতে হতো। তবে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ নিয়ম পরিবর্তন করা হয়।
এ বিষয়ে রাতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম বেগ বাংলানিউজকে বলেন, একাডেমিক কাউন্সিল ৩৩ ক্রেডিট বাতিলের সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই আমরা ৩৩ ক্রেডিট বাতিল করছি না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের বারবার আলোচনায় আসার আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের কোনো কথা না শুনে আমার কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়েছে।